নাম |
লীলা মজুমদার
(খ্যাতিমান লেখক)
|
লিঙ্গ: |
নারী
|
পেশা: |
|
ওয়েবসাইট: |
|
মাতৃভূমী: |
কলকাতা |
বর্তমান নিবাস:
স্থায়ী নিবাস: কলকাতা
সংক্ষিপ্ত জীবনি:
লীলা মজুমদার (২৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯০৮ – ৫ এপ্রিল, ২০০৭) বাংলা সাহিত্যের এক স্বনামধন্য লেখিকা হলেন লীলা মজুমদার।
তিনি কলকাতার রায় পরিবারের প্রমদারঞ্জন রায় ও সুরমাদেবীর একমাত্র সন্তান। তাঁর জন্ম রায় পরিবারের গড়পাড় রোডের বাড়িতে। সুরমা দেবী ছিলেন উপেন্দ্রকিশোরের পালিত কন্যা। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী (যাঁর পৈতৃক নাম ছিল কামদারঞ্জন) ছিলেন প্রমদারঞ্জনের বড় ভাই এবং লীলার কাকা। সেই সূত্রে লীলা হলেন সুকুমার রায়ের খুড়তুতো বোন এবং সত্যজিৎ রায়ের পিসি।
লীলা রায় বিখ্যাত দন্তচিকিৎসক সুধীর কুমার মজুমদার এর সাথে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ হন। বাল্যকালের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছেন শিলংয়ে। তার প্রাথমিক শিক্ষা লরেটো কনভেন্ট স্কুল, শিলং থেকে হয় তারপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজি পরীক্ষায় তিনি ইংরাজিতে সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করেন। পারিবারিক ধারার সঙ্গে মিশে ইংরেজি সাহিত্যের সঙ্গেও তার পরিচয়টা ছিল গভীর। লীলা মজুমদার ও সুধীর কুমার মজুমদারের ছিল দুই ছেলেমেয়ে। স্বামী, ছেলেমেয়ে, সংসার, কর্মজীবন সবকিছু ছাপিয়ে লীলা মজুমদার ছিলেন লেখিকা। যিনি অকাতরে দিয়েছেন কিশোর সাহিত্যকে।
তার প্রথম গল্প “লক্ষ্মীছাড়া” ১৯২২ সালে “সন্দেশ” পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তাঁর উল্লেখযোগ্য রচনাবলী হল- টংলিং (উপন্যাস), পদিপিসির বর্মীবাক্স, হলদে পাখির পালক, বাতাস বাড়ি, বিড়ালের বই, গূপের গুপ্তধন, গুপির গুপ্ত খাতা, মাকু গামা, পাকদন্ডী, সুকুমার ইত্যাদি। তার লেখা ‘মনের কথা’ সন্দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
তার কর্ম জীবনের সূচনা হয় ১৯৭১ সালে দার্জিলিংয়ের মহারানি গার্লস স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে। পরে রবীন্দ্রনাথের অনুরোধে একবছর শান্তিনিকেতনে ও শিক্ষা দান করেন। এরমধ্যে তিনি আশুতোষ কলেজের মহিলা বিভাগীয় যোগদান করেছিলেন। কিন্তু লেখালেখির মধ্যেই নিজেকে বেশি নিয়োজিত রেখেছেন। অল ইন্ডিয়া রেডিও তে কাজ করেছেন বেশ কিছুদিন।
তার প্রথম গল্পগ্রন্থের ইলাস্ট্রেশন (illustration) উপেন্দ্রকিশোরের মৃত্যুর পর সন্দেশ পত্রিকা পরিচালনার দায়িত্ব সুকুমার নিলে তিনি লেখা দেন। এই পত্রিকার সঙ্গে তার আজীবন যোগ ছিল। ১৯৬৩-১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তিনি এই পত্রিকার প্রকাশনায় সহ-সম্পাদিকা রূপে সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন।
তার সর্ব মোট ১২৫ টি বই প্রকাশিত হয়। যার মধ্যে রয়েছে একটি গল্প সংকলন, পাঁচটি সহ লেখিকা রূপে, নয়টি অনূদিত গ্রন্থ এবং ১৯ টি সম্পাদিত গ্রন্থ। তার প্রথম গ্রন্থ বদ্যি নাথ এর বাড়ি (১৯৩৯) দ্বিতীয় প্রকাশনা ‘দিনদুপুরে’ (১৯৪৮)। তিনি শিশু সাহিত্যের পাশাপাশি, গোয়েন্দা গল্প, ভূতের গল্প লিখেছেন অনেকগুলি।
তার আত্মজীবনী মূলক রচনা ‘পাকদন্ডী’ তে শিলং থাকাকালীন শৈশবের স্মৃতি থেকে শুরু করে শান্তিনিকেতন এবং অল ইন্ডিয়া রেডিও তে কাজের স্মৃতি কে উল্লেখ করেছেন বেশ সুন্দরভাবে। তিনি বাংলাতে অনুবাদ করেছেন- জনাথন সুইফট এর ‘গালিভার ট্রাভেলস’ এবং আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ‘ওল্ড ম্যান এন্ড দ্য সী’। লেখালেখির পাশাপাশি মিডিয়াতে তার কাজের অনেক অনুভব রয়েছে। অল ইন্ডিয়া রেডিও তে মহিলাদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান তিনি পরিচালনা করতেন। ১৯৭২ সালে তার ‘পদিপিসির বর্মী বাক্স’ চলচ্চিত্রে রূপায়িত হয়।
ছোটদের শ্রেষ্ঠ গল্প মনিমালা, বাঘের চোখ, টাকা গাছ, লাল-নীল দেশ্লাই, বাঁশের ফুল, ময়না, শালিক, আগুনি বেগুনি, টিপুর ওপর টিপুনি, শিবুর ডায়েরি, ফেরারী, এই যে দেখা, শ্রীমতি, পেশা বদল এসব অনেক বিখ্যাত।
লীলা মজুমদার তার স্বনামধন্য লেখালেখির জন্য অনেক সময় অনেক পুরস্কারে পুরস্কৃত হয়েছেন তারমধ্যে আনন্দ পুরস্কার, ভারত সরকারের শিশু সাহিত্য পুরস্কার, রবীন্দ্র পুরস্কার, সংগীত নাটক একাডেমি পুরস্কার, বিদ্যাসাগর পুরস্কার এইগুলি উল্লেখিত।
১৯৭৫ সাল থেকে তিনি পাকাপাকি ভাবে শান্তিনিকেতনে থাকতে শুরু করেন। সেখানেই ২০০৭ সালের ৫ই এপ্রিল তাঁর মৃত্যু হয়। বাংলা সাহিত্যের প্রতি তার অবদান সমুদ্র তুল্য। তিনি তার লেখার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে এক উজ্জল স্থানে নিয়োজিত করেছিলেন।