Loader
  • আজ বৃহঃস্পতিবার ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১ |
  • ২১শে নভেম্বর ২০২৪

এক নজরে শিশু সাহিত্য বিকাশ কেন্দ্র

খ্যাতিমানদের লেখা .. টি মোট নিবন্ধিত সদস্য .. জন
মোট প্রকাশিত লেখা .. টি লেখা প্রকাশ করেছেন .. জন
মোট মন্তব্য প্রকাশিত .. টি বিদেশী লেখা প্রকাশিত .. টি   
রাজার বাগানের কোণে টুনটুনির বাসা ছিল। রাজার সিন্দুকের টাকা রোদে শুকুতে দিয়েছিল, সন্ধ্যার সময় তাঁর লোকেরা তার একটি টাকা ঘরে তুলতে ভুলে গেল।
 
টুনটুনি সেই চকচকে টাকাটি দেখতে পেয়ে তার বাসায় এসে রেখে দিলে, আর ভাবলে, ‘ঈস! আমি কত বড়লোক হয়ে গেছি! রাজার ঘরে যে ধন আছে, আমার ঘরে সেই ধন আছে!’ তারপর থেকে সে খালি এই কথাই ভাবে, আর বলে—
 
রাজার ঘরে যে ধন আছে
টুনির ঘরেও সে ধন আছে!
 
রাজা তাঁর সভায় বসে সে-কথা শুনতে পেয়ে জিগগেস করলেন, ‘হ্যাঁরে। পাখিটা কি বলছে রে?’
 
সকলে হাত জোড় করে বললে, ‘মহারাজ, পাখি বলছে, আপনার ঘরে যে ধন আছে, ওর ঘরেও নাকি সেই ধন আছে!’ শুনে রাজা খিলখিল করে হেসে বললেন, ‘দেখ তে ওর বাসায় কি আছে।’
 
তারা দেখে এসে বললে, ‘মহারাজ, বাসায় একটি টাকা আছে।’
 
শুনে রাজা বললেন, ‘সে তো আমারই টাকা, নিয়ে আয় সেটা।’
 
তখুনি লোক গিয়ে টুনটুনির বাসা থেকে টাকাটি নিয়ে এল। সে বেচারা আর কি করে, সে মনের দুঃখে বলতে লাগল—
 
রাজা বড় ধনে কাতর
টুনির ধন নিলে বাড়ির ভিতর!
 
শুনে রাজা আবার হেসে বললেন, ‘পাখিটা তো বড় ঠ্যাঁটা রে! যা, ওর টাকা ফিরিয়ে দিয়ে আয়।’
টাকা ফিরে পেয়ে টুনির বড় আনন্দ হয়েছে। তখন সে বলছে—
 
রাজা ভারী ভয় পেল
টুনির টাকা ফিরিয়ে দিল।
 
রাজা জিগগেস করলেন, ‘আবার কি বলছে রে?’
 
সভার লোকেরা বললে, ‘বলছে যে মহারাজ নাকি বড্ড ভয় পেয়েছেন, তাই ওর টাকা ফিরিয়ে দিয়েছেন।’
 
শুনে তো রাজামশাই রেগে একেবারে অস্থির! বললেন, ‘কি, এত বড় কথা! আন তো ধরে, বেটাকে ভেজে খাই!’
 
যেই বলা অমনি লোক গিয়ে টুনটুনি বেচারাকে ধরে আনলে। রাজা তাকে মুঠোয় করে নিয়ে বাড়ির ভিতর গিয়ে রানীদের বললেন, ‘এই পাখিটাকে ভেজে আজ আমাকে খেতে দিতে হবে।’
 
বলে তে রাজা চলে এসেছেন, আর রানীরা সাতজনে মিলে সেই পাখিটাকে দেখছেন।
 
একজন বললেন, ‘কি সুন্দর পাখি! আমার হাতে দাও তো একবার দেখি।’ বলে তিনি তাকে হাতে নিলেন। তা দেখে আবার একজন দেখতে চাইলেন। তার হাত থেকে যখন আর একজন নিতে গেলেন, তখন টুনটুনি ফসকে গিয়ে উড়ে পালাল।
 
কি সর্বনাশ! এখন উপায় কি হবে? রাজা জানতে পারলে তো রক্ষা থাকবে না!
 
এমনি করে তাঁরা দুঃখ করছেন, এমন সময় একটা ব্যাঙ সেইখান দিয়ে থপ-থপ করে যাচ্ছে। সাত রানী তাকে দেখতে পেয়ে খপ করে ধরে ফেললেন, আর বললেন, ‘চুপ চুপ! কেউ যেন জানতে না পারে। এইটেকে ভেজে দি, আর রাজামশাই খেয়ে ভাববেন টুনটুনিই খেয়েছেন!’
 
সেই ব্যাঙটার ছাল ছাড়িয়ে তাকে ভেজে রাজামশাইকে দিলে তিনি খেয়ে ভারী খুশী হলেন।
তারপর সবে তিনি সভায় গিয়ে বসেছেন, আর ভাবছেন, ‘এবারে পাখির বাছাকে জব্দ করেছি।’
 
অমনি টুনি বলছে—
 
বড় মজা, বড় মজা,
রাজা খেলেন ব্যাঙ ভাজা!
 
শুনেই তো রাজামশাই লাফিয়ে উঠেছেন। তখন তিনি থুতু ফেলেন, ওয়াক তোলেন, মুখ ধোন, আরও কত কি করেন। তারপর রেগে বললেন, ‘সাত রাণীর নাক কেটে ফেল।’
 
রাজা মশাই ওয়াক তোলেন।
 
অমনি জল্লাদ গিয়ে সাত রানীর নাক কেটে ফেললে।
 
তা দেখে টুনটুনি বললে—
 
এক টুনিতে টুনটুনাল
সাত রানীর নাক কাটাল!
 
তখন রাজা বললেন ‘আন বেটাকে ধরে! এবার গিলে খাব! দেখি কেমন করে পালায়!’
 
টুনটুনিকে ধরে আনলে।
 
রাজা বললেন,‘আন জল!’
 
জল এল। রাজা মুখ ভরে জল নিয়ে টুনটুনিকে মুখে পুরেই চোখ বুজে ঢক করে গিলে ফেললেন।
সবাই বললে ‘এবারে পাখি জব্দ!’
 
বলতে বলতেই রাজা মশাই ভোক্ করে মস্ত একটা ঢেকুর তুললেন।
 
সভার লোক চমকে উঠল, আর টুনটুনি সেই ঢেকুরের সঙ্গে বেরিয়ে এসে উড়ে পালালো।
 
রাজা বললেন, ‘গেল গেল। ধর, ধর!’ অমনি দুশো লোক ছুটে গিয়ে আবার বেচারাকে ধরে আনলো।
 
তারপর আবার জল নিয়ে এল, আর সিপাই এসে তলোয়ার নিয়ে রাজা মশায়ের কাছে দাঁড়াল, টুনটুনি বেরুলেই তাকে দু টুকরো করে ফেলবে।
 
এবার টুনটুনিকে গিলেই রাজামশাই দুই হাতে মুখ চেপে বসে থাকলেন যাতে টুনটুনি আর বেরুতে না পারে। সে বেচারা পেটের ভিতরে গিয়ে ভয়ানক ছটফট করতে লাগল।
 
খানিক বাদে রাজামশাই নাক সিঁটকিয়ে বললেন, ‘ওয়াক্‌।’ অমনি টুনটুনিকে সুদ্ধ তাঁর পেটের ভিতরের সকল জিনিস বেরিয়ে এল।
 
সবাই বললে, ‘সিপাই, সিপাই! মারো, মারো! পালালে।!’
 
সিপাই তাতে থতমত খেয়ে তলোয়ার দিয়ে যেই টুনটুনিকে মারতে যাবে, অমনি সেই তলোয়ার টুনটুনির গায়ে না পড়ে, রাজামশায়ের নাকে পড়ল।
 
রাজামশাই তো ভয়ানক চেঁচালেন, সঙ্গে-সঙ্গে সভার সকল লোক চেঁচাতে লাগল। তখন ডাক্তার এসে ওষুধ দিয়ে পটি বেঁধে অনেক কষ্টে রাজামশাইকে বাঁচাল।
 
টুনটুনি তা দেখে বলতে লাগল—
 
নাক-কাটা রাজা রে
দেখ তো কেমন সাজা রে!
 
বলেই সে উড়ে সে-দেশ থেকে চলে গেল। রাজার লোক ছুটে এসে দেখল, খালি বাসা পড়ে আছে।
সংগ্রহকারী: সুপার এডমিন
প্রকাশ তারিখ: 23-09-2021,  ক্যাটাগরি: ছোটগল্প ,  লেখক: উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী  (সম্পাদিত 2 বার)
মন্তব্য লিখুন
মন্তব্য করতে লগইন করুন।
মন্তব্য সমুহ:
কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এই লেখাটির পুরো স্বত্ব লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত। অনুমতি ব্যতীত অন্য কোথাও লেখাটি প্রকাশ করা থেকে সম্পূর্ণ বিরত থাকুন। প্রকাশ করা হলে তা কপিরাইট আইনের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হবে।

সামাজিক যোগাযোগ
শেয়ার করুন
লেখক খুঁজুন
লেখা খুঁজুন
আজকে যাদের জন্মদিন
Loading...
লেখার ক্যাটাগরি

সাধারণত শিশু সাহিত্য বিষয়ক সব বিষয়ের উপড়ই আমরা লেখা আহ্বান বা প্রকাশ করে থাকি। শিশু সাহিত্য বহির্ভূত কোন প্রকার লেখাই এখানে প্রকাশ করা হয় না। নিম্নোক্ত বিভাগগুলির শিশু সাহিত্য লেখার জন্য সকলকে অনুরোধ করা হলো।

Loading...
মনোনিত জনপ্রিয় লেখক
নতুন মেম্বার
Loading...

শিশু সাহিত্য বিকাশ কেন্দ্রে নীতিমালা মেনেই লেখা প্রকাশ করতে হবে। এখানে নীতিমালা বহির্ভূত কোন লেখাই প্রকাশ করা যাবে না। যদি কেউ প্রকাশ করেন তার দায় শুধুমাত্র লেখকের উপরই বর্তাবে। তার জন্য শিশুসাহিত্য বিকাশ কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষ বা এর সাথে সম্পৃক্ত কারোর উপরই তার দায় বর্তাবে না। লেখা প্রকাশের পূর্বে অবশ্যই আমাদের নীতিমালার বিষয়ে অবগত হউন।